মোনালী রায়

 

মোনালী রায়ের কবিতা

পরীক্ষিত পরীক্ষিৎ




ক্রমাগত চেষ্টা করছি পালাতে, একজোড়া ছায়া থেকে। ওই যারা পান্ডুর বাণে মারা পড়েছিল, ক্ষণকাল। এক ঘুম থেকে আর এক ঘুমে ভয়ানক ভাবে জীবিত! এতবেশি সহ্য করতে পারে, এত ভার, এত স্থিতিস্থাপক সংসার। ভাবতে এক্কেবারে ভাল লাগে না, ওদের মাঝে কোথাও আমার ছায়া নেই। বরং আমি শাপগ্রস্ত। জীবনের প্রগাঢ় স্বাদ থেকে চিরবঞ্চিত। যে বিষবৃন্ত, বিষাধার শ্যেনদৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখে প্রতিটি গতিবিধি তার থেকে নিজেকে বাঁচাতে এমন নিরালম্ব অবস্থান , অমৃত মুঠি ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বহুদূর!অথচ বিষধর ছায়া সুদূরপরাহত, অনন্ত প্রসবিনী।  ঈর্ষায় পুড়ে যাচ্ছে ইহকাল। জন্মগুলি জ্বলে যাচ্ছে চিতাতে অকারণ।  এত বিতৃষ্ণা তবু থামে না!!



নো ম্যানস্ ল্যান্ড



অসুরে অসুরে যুদ্ধ চলছে, তেপান্তরের মাঠের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে মোবাইল টাওয়ার, স্যাটেলাইট মনিটর, অ্যাশ - ফিল্ড। প্রাগৈতিহাসিক জলবিন্দু পলিকোটেড ওষুধের কেমিক্যাল গন্ধ নিয়ে পুঞ্জিভূত হচ্ছে ট্রোপোস্ফিয়ার ছাড়িয়ে...রুক্ষ ভূমি ধূ ধূ তৃষ্ণা বুকে নিয়ে অপেক্ষায়... এবার প্রবল বর্ষণ, নদী-নালা বাঁধ-ব্যারিকেড না মেনে ছাপিয়ে যাবে বহুকূল... গলে যাবে হিমবাহ, পাহাড়ে, মেরুতে। অবিরত অনাচারের সব চিহ্ন ধুয়ে মুছে গেলে, তৈরি হবে নতুন ভৌগলিক সীমানা...নতুন পাতার রাত-পোশাকে প্রকৃতির শরীর জোড়া খিদে, আগুন, স্বেদ...আবার ইতিহাস অথবা জীবনমুখী...



কোন এক দ্রৌপদি, কোন এক সুভদ্রা





অন্তর্দ্বন্দ্ব চলেছে মহাভারতের আগে থেকে! আজো চলে। আর প্রতিবারের মত আরো একবার, সুভদ্রা নিজগুণে হেরে যায়। স্বীকার করে, "প্রণম্য দ্রৌপদি তুমি সব, আমি তোমার পদতলে আশ্রিতা দাসীমাত্র।"


দ্রৌপদি প্রতিবারের মত জিতে যায়,এইবারও।


অথচ,মহাকালেরও ভুল হয় অন্যান্য পরিমাপকের মত।


দ্রৌপদি-সৃষ্ট কুরুক্ষেত্রে ভুল আছে কৃষ্ণের। কে না জানে নিয়তি, এক মায়াবিনীর নাম।  আরো একটু সতর্কতা, আরো আত্মরক্ষাকারী কবচ। একটি সন্তান অন্তত বাঁচত।

সুদীর্ঘ তেরো বছর তার সর্পতুল্য কেশগুচ্ছ কতবার আন্দোলিত হয়েছে অধৈর্য ক্রোধে। কর্ণের রথের চাকা ভক্ষণ করেছে ভূমি। কতশত বার ভঙ্গ হয়েছে অধম দুর্যোধনের উরু। বক্ষ চিরেছে সহস্রবার দুঃশাসনের! প্রতিবার ধর্ম জয়ী হয়েছে, আগুনে নিশ্চিহ্ন হয়েছে অধর্ম!

কৃষ্ণার্জুন, ভীমসহ পান্ডব ও পান্ডবসৈন্য ছিল তৎপর....


তবু কোথায় লুকিয়েছিল সন্তানহতকারী স্ফুলিঙ্গ!!


সেখানে হেরেছে অগ্নিপ্রসূতা মৃতবৎসা পাঞ্চালী, চিরনতমুখ মৃদুভাষিণী সুশীলা সুভদ্রার কাছে।



মেটামরফোসিস




দু-পায়ের গোছ থেকে হাজার খানেক পা বেরিয়ে পড়েছে। কাঁধের কোনা থেকে কয়েক হাজার হাত। মাথার দুধারে আরো শত মাথা, চোখ, নাক, কান।


ছোট, মোটা, নিষ্ক্রিয়।


শরীরে জমছে বস্তা বস্তা শরীর। সে অকর্মন্য তেল আর চর্বি জ্বালালে শহরজোড়া উৎসব হতে পারে  কিন্তু আপাতত কেউ লাভের কথা ভাবছে না। এখন গড়ানো লোকসানে, হারের ঢালে। লম্বা এক বিরতি পর‍্যন্ত। যেখানে ঘুম।


হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ ঘুমের আস্তরণ  দিয়ে সব বৃদ্ধি এক লহমায় ঢেকে ফেলা যায়

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments