শাশ্বতী সান্যাল


 

শাশ্বতী সান্যালের কবিতা

ব্রেইলে লেখা বিভ্রান্তিসমূহ



১.
একটা চোখ খুবলে নেওয়ার পর কী কী পড়ে থাকে? ঘিনঘিনে ক্ষত, মাছি, উপবাসী বেড়ালের জিভ। দরজা খুলতেই একটা নিতান্ত গোবেচারা 'ম্যাও' সেজে ঢুকেছিলো... এখন ভাতের দাবি আগলে থাকে, পেরোতে গেলেই চোখে আঁচড়ে দেয়। ডিপ ইনজুরি। নখের আগ্রাসী গর্তে দেখতে পাই বিঁধে আছে পূর্বজদের দম্ভ, আচার আর আচমনরীতি। পদ্মের বদলে চোখ, চোখের বদলে চোখ, পথের বদলে চোখ - রফা হয়।  আর...

পোষ্যের থাবার সামনে  কিছু শান্ত রক্ত ছিটকে আসে


২.
শব্দগুলো কেমন ছোঁয়াচে! গায়ে একবার আঙুল বোলালেই আঠা হয়ে হাতে লেগে যায়। পোষা বেড়ালের মতো তারপর চৌপরদিন পায়ে পায়ে এঘর ওঘর...   রাস্তায় বেরোলেও আশঙ্কা লেগে থাকে, যদি বৃষ্টিতে ভেজে, পথ হারিয়ে ফেলে! বড়রাস্তা পার করে যদি গলি খুঁজেই না পায়। অস্থির অস্থির লাগে। মণির দুপাশ ফুলে আঁকাবাঁকা শিরা ফুটে ওঠে। এরা কেউ পথ নয়, নিম্নবিত্ত গলির মতোন আবছা হয়ে মিশে গেছে অন্ধকারে, আরো অন্ধকারে। স্ট্রীটল্যাম্প থেকে সন্ধেবেলা আলোটুকু খুলে নিলে ফাঁপা শূন্য যেরকম হাসে সারারাত, তেমনই হাসির শব্দ কাছে দূরে শোনা যায়। পোষ্যেরা ফেরেনা...

নির্দিষ্ট সময় কেটে গেলে মরা বেড়ালের ছানা, মৃদু ফোঁপানির শব্দ পার হয়ে অন্ধ হেঁটে যায়।



৩.
পাহাড়ে গেলেও যে জন্মান্ধ তার আর সূর্যোদয় দেখা হয়না। ফায়ারপ্লেসের সামনে বসে সে খবর শোনে। চাষিদের আত্মহত্যার খবর। বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আসে ঘোষকের গলা। সকালে যেটুকু রোদ লেগেছিলো সঙ্গীদের জ্যাকেট, টুপিতে- এখন তা অস্তমিত। সিঙ্গল মল্টের গ্লাসে দুকুচি বরফ নেয় তারা। জোরে হাসে। সুদৃশ্য কার্পেটে ছাই ঝাড়ে।

পাহাড়ে গেলেও যে জন্মান্ধ, তার বুটে পালিশ পড়েনা। এবড়োখেবড়ো পথে ধুলোর বয়স বেড়ে চলে।

তারপর মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে টের পায় আলুক্ষেতে বরফ পড়েছে।


৪.
অনেকেই বিশ্বাস করেন অন্ধের কোনো স্বপ্ন থাকেনা। থাকলেও তা হয়তো সাদাকালো সিনেমার মতো। অথচ অন্ধটি স্পষ্ট দুবছর আগে একটি রঙিন মেয়ের স্বপ্ন দেখেছিলো। রেতঃপতনের পরও ঘুম ভেঙে আদিগন্ত সে কেঁপে উঠেছে

আজকেও তো স্বপ্ন দেখে ভিতরে কাঁপুনি হচ্ছে। বেহালার ছড় টানছে অন্ধকারে কেউ। রঙিন এসব কষ্ট,স্বপ্নদোষ, নষ্টমতি বেহালাবাদক ঘুমের ভিতরে ফিরে আসে। আর, জেগে উঠে সব অন্ধ নিজেকে জিজ্ঞেস করে - আজ কী রোমের শেষ দিন?




৫.
মাঝরাতে আবার বেড়ালের অত্যাচার শুরু হয়। তৃতীয় নয়ন নিভে আসে। অসমাপ্ত লেখাগুলো টাইপ করতে বসে বারবার হাত কেঁপে যায় । শব্দযতি বদলে গিয়ে বাক্য ভেঙে পড়ে। কালি ধেবড়ে আঁচড়ের মতো...সারাগায়ে দাগ লেগে যায়।ভয়ে চোখ বন্ধ করলেও দেখতে পাওয়া যায়, সে আঁচড় বরাবর পুঞ্জিভূত রক্তস্রোত নেমে আসছে। আর অন্ধকারে কে যেন চিৎকার করছে : শালা অন্ধ! দেখিস না চোখে?

No comments:

Post a Comment

Facebook Comments