শুভদীপ মৈত্র

 

শুভদীপ মৈত্র-র কবিতা

ক্যারাভ্যান

 


তোমাকে ডেকেছিলাম চায়ের পরবে।
ব্রেজিয়ারে বসানো পাত্রে বুদবুদ ওঠে,
               যেভাবে ফোটে গ্রীষ্মে চাঁপার ফুল,
আর চায়ের পাতারা যেন কুঁকড়ন লজ্জাবতী, খুলে যাবে,
একদিন আমাকে যেভাবে মেলেছিলাম।
তার মৃদু গন্ধ – শুধুমাত্র দু’খানি পেয়ালায় রয়েছিল
                                     খনেকের তরে।

এমন চায়ের পরবে তুমি ডাকলে যাদের
এমন চায়ের পরবে আমিও ডাকলাম কারোকে
গন্ধ নিতে এল কেউ, কেউ নিতে অভ্যাসী মৌতাত
তারা চলে গেল ফেলে অপেক্ষা আর থিতোনো
                                  পাতার অবশেষ।

এখন বোধিধর্ম কোন শান্তি-গন্ধ ঘুরে যাবে এমন চায়ের পরবে
এভাবে আমরাও কীভাবে ফিরে যাব এমন চায়ের পরবে।

১০
শব্দেরা আসে শ্লথ, পাহাড় ডিঙিয়ে গিরিবর্ত্ম চিরে নেমে আসে
বরফকুচির মতো – এসে লাগে শুকনো চামড়ায়,
আর শিরদরিয়ার স্রোতে কিশোরী ভাসিয়ে দেয় সুর।
তার টোলগানের উপর ভাত ফোটে,
ওইটুকু বলয়ের ভিতর ধরা আঁচে গান হয় রাখাল বালক,
যার জন্য কয়েক টুকরো সিসলিক আর শুকনো রুটির গন্ধ
পাহাড়ের গা বেয়ে উঠছে তখন।
এখানে টেলিভিশন নেই, এখানে এসব খবর দেয় বুড়ো এরদেক,
বোঁচা নাক খুঁটতে খুঁটতে সুর করে বলে যেতে থাকে,
সাড়ে ন’ মাইল দূরের রেডিও শুনে এসে।
কিছু কিছু কথা যার সে হারিয়ে এসেছে পাকদণ্ডীতে,
শব্দগুলো সেখানেই নিজেদের মধ্যে কানাকানি করে নেয়।
সেই সব শুনে কিশোরীর পাশে চুপ করে দাঁড়ায় মোটবাহক খচ্চর
খুরের বেদনা ফেলে রেখে। কেন যে তাকায় স্থির চোখে
মেয়েটার দিকে, মনে হয় বিগত শতাব্দীরা এসে শাশ্বতকে চিনছে।

* টোলগান: আগুনের উপর রান্নার পাত্র বসানোর দুটি রিঙঅলা লোহার আঙটা
** সিসলিক :  ঝলসে রান্না-করা মাংসের টুকরো

১১
কাক আর পেঁচারা পাহাড়ি গুহায়
                     একে অপরকে খতমের অস্তর শানায়....

বইগুলো পোকাদের পেটের ভিতর কবে হজম হয়ে গেছে
বাকি কটা পোড়াল হেরেসির আগুনে ছুঁড়ে – উন্মাদ,
তাদেরও নাকি অন্বেষী পথচলা ছিল।
চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মঠের বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ে
ওক্যাম, বোধিধর্ম – ঝুলিতে যিশু বা বুদ্ধের গল্প একেকটা ঢেউ
ইয়াংসি, নীল, টাইগ্রিসের পলি হয়ে উর্বরতা আনে।

এইখানে মিশে ছিল রেশমের ঘ্রাণ আর মশলা
অনেক খুড়ের, চাকার, তাঁবুর কোলাহল চিহ্ন পড়ে আছে।
তবু তার হাত বদলে সিক্কারা সড়ক বানায়,
ধাতব ইস্পাতের পাহারায় মত ও পথের
মোড় ছেড়ে রাস্তারা এগোতে থাকে কিনারার দিকে।

কাক আর পেঁচারা পাহাড়ি গুহায়
                     একে অপরকে খতমের অস্তর শানায়.....

১২
বিষ্ণু শর্মার কুমীরের পিঠে চরে ভবম হাজম
চলে যায় ইউনানের দিকে – দাড়ি চুলকোয়
চোখ পিটপিট করে, দেখে তার ছবি কারা যেন
পার্থেননের দেওয়ালে খুদে রেখেছে আগেই।
ভবঘুরে,নেহাত বুজরুক ভাবে মোল্লা নাসিরের কাছে
গিয়ে এর সুলুক সন্ধান চাইতে হবে  –
     তারপর ভুলে যায়, ঘুমিয়ে পড়ে, কত কত দিন।
ঘুম থেকে উঠে রাজকন্যার প্রাসাদ বা বদ্ধভূমি
             দুইই মনে হতে থাকে আমাদের পৃথিবীটা।



No comments:

Post a Comment

Facebook Comments