অনিন্দিতা ভৌমিক

 

অনিন্দিতা ভৌমিকের কবিতা

 নিষিদ্ধ সময়জাত



৫.
পুরাকাল। সে স্নেহ। সে স্তনের ভারে নুইয়ে যাওয়া বিছানায় হাত রাখে। উৎসমুখ ধরে টের পায় কতটা স্মৃতি হারিয়ে গেছে, কতটা জড়তা খুলে গেছে স্পর্শকাতর বাক্যের শরীরে।
একটা পরিধি নিয়ে ফিরছি আমি
কিছু মেদ কিছু উচ্চারণ নিয়ে ফিরছি
লাল পাথরের মেঝেতে

যেভাবে ভেজা কাপড়ের কথা। আর মোটা দাগ বরাবর বিস্ময় নিয়ে ভাবছ। ঠোঁটের ভাঁজের মত সাবধানে তুলে নিচ্ছ তার নিরাময়টুকু। কুন্ঠা থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়া স্বাভাবিক ভঙ্গিটুকু।


 ৬.
নিজেদের খুঁজে পাচ্ছি দৃঢ়তার ভেতরে। উজ্জ্বল মাছের দিকে ধাবমান তামার বাসনে। আর নীতি থেকে নির্দেশ গৃহীত হয়। খুব সংক্ষেপে আলোচিত হয় মূল গঠনের ভূমিকা। যা দীর্ঘস্থায়ী। লালিত পেশার গায়ে বিভেদ ফেলে রাখে। অথবা ছাঁচে করে তুলে নেয় নিবিড় কৌশল। যেভাবে ধূসর এক পুরুষ আর এক নারী তাদের চিহ্ন খোদাই করেছিল পায়ে ভর দিয়ে। সমতল কাগজে মুছে দিয়েছিল কামনার সারটুকু।


৭.
অথচ বিষয় থেকে যাচ্ছে। প্রথমবারের জন্যে আমাদের দূরত্ব কমতে কমতে মিলে যাচ্ছে দুটো বিহ্বল চোখের জন্যে। আংশিকভাবে সম্পৃক্ত এই ক্ষতের জন্যে। উজ্জ্বল মাছের দিকে মুখ ঘুরিয়ে আমরা বুঝে যাচ্ছি বিরামহীনতার কথা। তামার বাসনে কালো হয়ে ওঠা নিঃশ্বাসের কথা।
আর পেশিগুলো শ্লথ। সামান্য বাতাসেও ফুলে ওঠে। ন্যস্ত হয়ে থাকে যেখানে শরীর খুব গাঢ়, কিছুটা অমেয়...


৮.
শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারি এখানে কোনো ব্যবহার নেই শব্দের। পা ফেলি। আর গভীর এক নুনজলের আভাস ভিজে ওঠে। তাকে ঠিক দূরত্ব বলা যায় না। বরং অনেকটা ঘুরে ফিরে জুড়ে থাকা ব্যপ্তি। শিরোনাম লেখার আগের নিপুণ কৌশল। কিছুটা ধারণা তুলে রাখছে। ত্বরণ বদলে বদলে হয়তো সূত্র হিসেবে সাজিয়ে রাখছে হলুদ একটা ছায়া। আড়ালে ঝুলে থাকা মৃত পতঙ্গের ডানা। যেকোনো অংশ থেকেই তাকে সরিয়ে ফেলা যায়। প্রথামতো বসিয়ে রাখা যায় মদ-মাংস-শুভ্র শরীরের আয়োজনে।


৯.
“ I cannot speak with my voice, but I speak with my voices… ”

শব্দের পরে একটা নীরবতা আসে। টোকা দেয়। উপমা থেকে উড়িয়ে দেয় বিভ্রমের কণা। কিছুটা অক্ষর হয়ে, কিছুটা অকারণে বেঁচেবর্তে থাকা। এই প্রক্রিয়া সাবলীল। অথচ তার বিকল্প ফুলে ওঠে। আসন্নতা নিয়ে কাটাকুটি করে শাকপাতা অথবা সাধের বালিশে।

উবু হয়ে বসো। যে দর্শন অবাধ তার কাছাকাছি তুমি। কব্জি ধরে নামিয়ে রাখছ গেঁজলে ওঠা ক্ষয়। হয়তো লাল কাঠের পেন্সিল। হয়তো গোটা শ্রাবণ জুড়ে লেগে থাকা প্রাচীন আখ্যান। যা পায়ে পায়ে দুধসাদা টেবিলে এসে ঠেকে।





১০.
এভাবেই সময় থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছি। নির্দিষ্ট অবয়ব থেকে বেরিয়ে দেখছি, তার বাতিল শব্দ। ত্বকের ভেতর থকথকে অস্বচ্ছতা। আর তুমি, তোমার দীর্ঘশ্বাসে ফুলে ওঠা জখম, তোমার হিসেবনিকেশ...আদতে কন্ঠস্বরের বেশি কিছু না। বরং সে নিরাপদ থাকে। মুখে হাত দিয়ে টেনে নেয় লবনের স্বাদ। হাতলের গায়ে ঝুলিয়ে রাখে সঠিক প্রসারণ। যেভাবে অনেকটা ভুল করেও সংজ্ঞা মেলানো যায়। যেভাবে আমাদের পরিচয়, হাসি বিনিময়ের পর তাকিয়ে থাকে আড়চোখে। খুলে আসা সুতো অথবা বুননের দিকে।



১১.
মুহূর্তই সব যা অমোঘ হয়ে ওঠে। দিনের মাঝে তিরতির করে ঝুলিয়ে রাখে একটা সাদা রঙ। প্রশ্ন করে। প্রশ্নের ঠোঁট কামড়ে তুলে আনে আগামী বছরের কথা। যেখানে একজোড়া ডানা। পালকের গায়ে রক্ত লেগে আছে। ভাঙা টেবিলের উপর ছিটিয়ে আছে শুকনো দাগ। আর ঠিক দরজা অব্দি হেঁটে যাচ্ছে কেউ। তাকিয়ে থাকছে কবেকার ফাঁকা অন্ধকারের দিকে।
আমরা হাড়গোড় সরিয়ে রাখি। নাগালের বাইরে ঠেলে দিই অপেক্ষারত ভঙ্গি। জুতোর ফিঁতে বাঁধার মতো সামান্য আয়ু। যাদের চোখে কাজল। যাদের পায়ের পাতা ভারি হয়ে আসে।



১২.
কিছুটা আলস্য রেখো দু’পলক গভীরে

তাকে অমরত্ব পেয়ে বসে। ফ্রেম থেকে ঝাঁপ দেয়। স্বল্পায়ু গঠনের ভেতর সাপ্টে তোলে নোনা হাওয়া। অথচ যুক্তির প্রয়োজন ছিল। জানলা দিয়ে ঢুকে পড়া দৃশ্যে ছিল ঘাড়, ঘাড়ের পেছনে স্নানরত ফেনা। একটি শব্দ, একটি দৃষ্টি, একটি মুদ্রায় যেভাবে দিনগত হেঁটে যাওয়া মনেপড়ে।
স্থিরতা বলতে আমি ভাঙা হাড়ের কথা ভেবেছি। মাছের স্থূলতা নিয়ে ভেবেছি কর্তব্যের খাতিরে। দেখি উঠোন জুড়ে তার ফোড়নের ঝাঁজ। সারারাত পিঠ ছাপিয়ে, সমস্ত এঁদো গলি ছাপিয়ে খোলা পড়ে আছে...



 

1 comment:

  1. কবিতায় দেখি ক্ষত ও বিষাদের উপর ম্যাগ্নিফাইং চোখ রেখে দেখে নেওয়া অস্তিত্বকে. দেখছি ছবির অসমাপ্তির মুহূর্তগুলিকে. অনুভূতিতে আসে দু:খের অভিযোগময় নীরব প্রসাধন.

    ReplyDelete

Facebook Comments